সুন্দরবন পূর্ব এবং পশ্চিম বিভাগের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের (ডিএফও) পক্ষ থেকে ওই তালিকা খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে বৃহস্পতিবার দাখিল করা হয়।
সুন্দরবনে বুলবুল তাণ্ডব চালানোর পর পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের পক্ষ থেকে বনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপনের জন্য কাজ শুরু করে। ওই তালিকায় সুন্দরীসহ মোট চার হাজার ৫৮৯টি গাছের ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে ডিএফওরা জানান।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনউদ্দিন খান জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার পর সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য সুন্দরবন পূর্ব এবং পশ্চিম বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কয়েকদিন ধরে সরজমিনে বনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ডিএফওদের পক্ষ থেকে তার কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা জমা দেয়া হয়েছে। ওই তালিকায় বিভিন্ন প্রজাতির কিছু গাছ এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তবে সুন্দরবনে কোন বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।
ডিএফওদের দেয়া তথ্যমতে, সুন্দরবনের মোট চার হাজার ৫৮৯টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে গাছের মোট ক্ষতি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪২ টাকা এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশিরুল আল মামুনের দেওয়া তথ্যমতে, বুলবুলের আঘাতে বনের পশ্চিম বিভাগে মোট চার হাজার দুইটি গাছের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭৪টি ছোট-বড় সুন্দরীগাছ এবং এক হাজার ৫৩৮টি গেওয়া গাছ। বাকি গাছগুলো বিভিন্ন প্রজাতির। এসব গাছের মূল্যে ধরা হয়েছে ৪১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এছাড়া অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ঝড়ে বনের কোন বন্যপ্রাণীর ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে তাদের বনায়ন করা বিভিন্ন প্রজাতির মাত্র ৫৮৭টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ওই সব গাছের ক্ষতির মূল্যে আট লাখ ৬২ হাজার ৭৪২ টাকা। এছাড়া অবকাঠামোগত এবং জলযানসহ অন্যন্য স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার আওতাধীন এলাকায় কোন বন্যপ্রাণী বা সুন্দরী গাছের ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।
ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করার পর খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করা হয়েছে বলে ডিএফওরা জানান।
প্রসঙ্গত, প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল গত রবিবার ভোরে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে আঘাত হানার পর উপকূলে আচড়ে পড়ে। খুলনা, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশালে অন্তত নয়জন নিহত হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক এবং গবেষক ড. মাহামুদ হোসেন বলেন, সুন্দরবন বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছাস থেকে উপকূলের মানুষকে রক্ষা করে চলেছে। প্রাকৃতিক দেয়া হিসেবে কাজ করছে সুন্দরবন। ১৫৮৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন ৭৪টি বড় ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করেছে। এজন্য সুন্দরবনকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূল অঞ্চলে বনায়ন করতে হবে। একই সাথে তিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের ক্যারিং ক্যাপাসিটির ওপর পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় গুরুত্ব দেন।